Dhaka 6:51 am, Friday, 20 December 2024
News Title :
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর বাইপাসে সড়ক দুর্ঘটনায় এক নারী নিহত, আহত চার টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে কমলা চাষে সাফল্য পেলেন দেলোয়ার মির্জাপুরে তিনদিন ব্যাপী ইসলামী যুব কল্যাণের তাফসিরুল কোরআন মাহফিল শুরু বৃহস্পতিবার টাঙ্গাইলে দেশে প্রাকৃতিক বন উজার করে আর কোন সামাজিক বনায়ন হবে না- উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান মির্জাপুরেনিরপেক্ষ, জবাবদিহিমূলক, জনমুখী, দক্ষ পুলিশ বাহিনী গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য-কমান্ড্যান্ট ডিআইজি আশফাকুল আলম মির্জাপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দের সৌজন্য সাক্ষাৎ মির্জাপুরে যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প মির্জাপুরের গোড়াইতে স্বপ্নের ৫১৩ তম নতুন আউটলেট উদ্বোধন মির্জাপুরের গোড়াইতে স্বপ্নের ৫১৩ তম নতুন আউটলেট উদ্বোধন মির্জাপুরে “মহেড়া পিঠা ঘর এন্ড পার্টি হাউজের শুভ উদ্বোধন

রোজা ঘিরে লাগামহীন নিত্যপণ্যের দাম

  • Reporter Name
  • Update Time : 01:17:29 am, Friday, 5 April 2024
  • 59 Time View

আমিরুল ইসলাম অমর: সিয়াম সাধনার রমজান মাস শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে প্রথম রোজাও শেষ। আজ দ্বিতীয় রোজা। রমজান মাসটি পুণ্যের হলেও বেশি মুনাফার আশায় থাকেন এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। এই মাসে অতিরিক্ত বেশি লাভ করতেও মরিয়া থাকেন তারা। এ যেন রীতিতে পরিণত করেছে এসব মুনাফাভোগী ব্যবসায়ীরা। বিগত বছরগুলোর ন্যায় এবারও ব্যতিক্রম ঘটছে না। তবে এবার অসাধু মুনাফাভোগী ব্যবসায়ীরা একটু বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এবার মাসখানেক আগে থেকেই নানা অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়াতে শুরু করেছেন তারা। সরকার এবার রোজায় বাজার নিয়ন্ত্রণে ভোক্তাদের নানা আশ্বাস দিলেও বাস্তবে তার চিত্র দেখা যাচ্ছে না। ছোলা, ডাল, চিনি, পেঁয়াজ, বেগুন, লেবু, শশা, ধনেপাতা, কলা, খেজুর, মাছ-মাংস, ফলমূল ও সবজিসহ প্রায় সবই চড়া দামে কিনতে হচ্ছে। রোজাকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষের খরচ আরো বাড়তে শুরু করেছে। মূল্যস্ফীতির চাপে এমনিতেই চিড়েচ্যাপ্টা সীমিত ও নিম্নআয়ের মানুষ। তার ওপর রোজা ঘিরে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন দাম।

রমজান মাসের বাড়তি খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় সময় কাটাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। দিন দিন মানুষের সংসারে চাপ বেড়েই চলছে। এমন পরিস্থিতিতে নিরব কষ্টে জনমনে হা-হুতাশ দেখা যাচ্ছে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রোজার মাস খানেক আগে থেকেই ছোলা, অ্যাংকর, মুগসহ সব ধরনের ডালের দাম বেড়েছে। খেজুরের দাম লাগামহীন। চিনির বাজারে অস্থিরতা। সয়াবিন তেলের দাম যদিও কিছুটা কমেছে, কিন্তু তা যৎসামান্য। ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দামও চড়া। দাম বাড়ার তালিকা থেকে বাদ পড়েনি চিড়া-মুড়িও। সবজির মধ্যে এরই মধ্যে বেগুন, শসা, লেবুসহ কয়েকটি পণ্যের দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুন।

সূত্র মতে, কয়েক বছর ধরে পবিত্র রমজান মাসে অন্তত কম দামে পেঁয়াজ কিনতে পারতেন মানুষ। কারণ, রোজা শুরুর সময় পেঁয়াজের মৌসুম চলে। এবার সেই পেঁয়াজের দরও চড়া। রোজা শুরুর আগে থেকেই রাজধানীর বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯০ থেকে ১১০ টাকা। গত বছর রোজার আগে একই পেঁয়াজের কেজি ছিল ৪০ টাকার মধ্যে।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তালিকা ধরে মোটা চাল, খোলা আটা, সয়াবিন তেল (বোতল), চিনি, মসুর ডাল (বড় দানা), অ্যাংকর ডাল, ছোলা, পেঁয়াজ, দেশি রসুন, দেশি শুকনা মরিচ, রুই মাছ, ব্রয়লার মুরগি, গরুর মাংস, ডিম (হালি) ও খেজুর- এই ১৫ পণ্যের মূল্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত রোজার তুলনায় এবার ১০টি পণ্যের দাম বেশি; পাঁচটির কম। যে পাঁচটি পণ্যের দাম কম, সেগুলোর মূল্য গত বছর অনেক বেড়ে গিয়েছিল। তারপর কমেছে। তবে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নয়। ফলে সেগুলোর দামও চড়া বলা যায়। যেমন ব্রয়লার মুরগি।

২০২২ সালের আগে ব্রয়লার মুরগি ছিল ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি। রোজা এলে দর কমত। কারণ, রোজায় রেস্তোরাঁগুলোতে মুরগির চাহিদা কমে যায়। এবার চিত্র ভিন্ন। দেশের বাজারে কয়েক মাস ধরে ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৯০ টাকার আশপাশে ছিল। এবার রোজায় দাম বেড়েছে। কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে গতকাল বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়। রোজা শুরুর আগের কয়েক দিনে এবার দাম বেড়েছে মসুর ডাল, অ্যাংকর ডাল, মুগডাল, ছোলা, চিনি, সোনালি মুরগি, গরুর মাংস, বিভিন্ন ধরনের মাছ, বেগুনসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি, লেবু, শসা, ধনেপাতা ও ফলের দাম। কমেছে শুধু সয়াবিন তেলের দাম।

সব মিলিয়ে নিত্যপণ্যের বাজার অনেকটা লাগামহীন। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, সেগুনবাগিচা, মালিবাগ, মগবাজার, রামপুরা, মোহাম্মদপুর, মিরপুর ও কারওয়ান বাজার ঘুরে গতকাল এই চিত্র দেখা গেছে। গতকাল যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজারে একজন সাধারণ ক্রেতার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, আমরা গরিব মানুষ। আপেল, কমলা, আঙ্গুর ও দামিদামি ফলমূল খেতে পারি না। তবে, রোজা আসলে লেবুর শরবত, কলা ও খেজুর খাওয়ার চেষ্টা করি। এবার মনে হয় তাও কপালে জুটবে না। লেবু মানভেদে ৪০ থেকে ১২০ টাকা হালি, খেজুর কমদামিটাও ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি। যে কলা তিন-চার দিন আগেও কিনেছি ৪০ থেকে ৮০ টাকা ডজন সেই কলা এখন ৮০ থেকে ১৫০ টাকা ডজন। আর অন্যান্য জিনিসের কথা না হয় বললামই না। এমন দাম থাকলে এগুলো কেনারও সাধ্য হবে না। হয়তো শুধু মুড়ি ও পানি দিয়েই আমাদের ইফতার করতে হবে।

বাজার করতে আসা স্বল্প বেতনের চাকরি করা একজনের সাথে কথা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, জিনিসের দাম অতিরিক্ত হওয়ায় চাহিদার চেয়েও অনেক কম জিনিস কিনে নিচ্ছি। তাও খুব প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো। ফলমূলের দাম শুনলেই হতবাক হয়ে যাই। এজন্য সেগুলো কিনতে পারি না। তিনি বলেন, রমজান মাস এলেই সব জিনিসের দাম বেড়ে যায়। অথচ কোনো জিনিসের অভাব নেই বাজারে। এভাবে চলতে পারে না। সংসার চালাতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের ঘোষিত ইশতেহারে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। নতুন মন্ত্রিসভা দায়িত্ব নেওয়ার পর দাম কমাতে চারটি পণ্যের (চাল, চিনি, ভোজ্যতেল ও খেজুর) শুল্ককর কমানো হয়। এতে কমেছে শুধু সয়াবিন তেলের দাম, লিটারে ১০ টাকা। বাজারে অভিযান, হুঁশিয়ারি অন্য পণ্যের দাম কমাতে পারেনি। নির্ধারিত দর কার্যকর করতেও সফল হয়নি সরকারি সংস্থা।

যেমন রান্নায় ব্যবহৃত তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ১২ কেজির সিলিন্ডারের নির্ধারিত দর ১ হাজার ৪৮২ টাকা। যদিও রাজধানীতে তা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৭০০ টাকার আশপাশে।

এদিকে, ইফতারে মানুষ সাধারণত ছোলা, বেগুনি, পেঁয়াজু, শসা ও কিছু ফল রাখেন। শরবত তৈরির জন্য লাগে লেবু। দুই মাস আগেই ছোলার দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছিল। এখন বেড়েছে আরো ৫ টাকা। বাজারে ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকা কেজি। বেগুনি তৈরির বেগুনের দাম বেড়েছে গত দুই দিনে। লম্বা বেগুন ছিল মানভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। গতকাল তা ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়।

মৌসুমের এই সময়টায় ক্ষিরা থাকে। দামও কম থাকে। কয়েক দিন আগেও ক্ষিরা ৪০ টাকার আশপাশে ছিল। গতকাল তা ৭০ থেকে ৯০ টাকা কেজি চান বিক্রেতারা। শসার দামও ৬০ থেকে বেড়ে ৯০ থেকে ১১০ টাকা কেজি হয়েছে। লেবুর দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। আকারভেদে প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ১২০ টাকা।

শরবত তৈরিতে লাগে চিনি। বাজারে এক কেজি চিনি কিনতে এখন ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা লাগছে। এবার চিনির ওপর শুল্ক কমানো হয়েছিল। তাতে দাম কমার কথা কেজিতে ১ টাকার মতো। কিন্তু দাম কমেনি; বরং বেড়েছে কেজিতে পাঁচ টাকা।

খেজুরের দাম কমাতে রোজার আগে সরকার শুল্কহার ১০ শতাংশ কমিয়ে দেয়। যদিও এখনো খেজুর আমদানিতে ১৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক, ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট), ৫ শতাংশ করে অগ্রিম আয়কর ও অগ্রিম কর এবং ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক রয়েছে। পাশাপাশি গত নভেম্বরে খেজুরের ট্যারিফ ভ্যালু (শুল্ক আরোপের সর্বনিম্ন দর) বাড়ানো হয়। সব মিলিয়ে বাজারে খেজুরের দাম এক টাকাও কমেনি; বরং বেড়েছে। টিসিবির হিসাবে, সাধারণ মানের খেজুরের সর্বনিম্ন দর এখন ২৮০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগেও ২৫০ টাকা ছিল।

ইফতারে অনেকেই খেজুরের পাশাপাশি মাল্টা, আপেল, পেয়ারা, আনারস, তরমুজ ইত্যাদি রাখার চেষ্টা করেন। ফলের দাম কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে। যেমন এক কেজি মাল্টা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা চাইছেন বিক্রেতারা।

স্বল্প আয়ের পরিবারেও সাহরিতে মাছ অথবা মাংসের কোনো পদ রাখার চেষ্টা থাকে। গতকাল মাছ কেজিতে ২০ থেকে ১০০ টাকা বেশি চাইছিলেন বিক্রেতারা। চাষের বাইরে অন্যান্য মাছের দাম অত্যধিক বেশি। যেমন নদীর ছোট চিংড়ির কেজি ১ হাজার ২০০ টাকা। মাঝারি শোল মাছের কেজি চাওয়া হচ্ছিল ৮০০ টাকা। সোনালি মুরগির দাম ৩০ টাকা বেড়ে ৩৩০-৩৫০ টাকা এবং গরুর মাংস ৫০ টাকা বেড়ে ৭৫০-৮০০ টাকা কেজি বিক্রি করতে দেখা যায়।

টিসিবির বাজার বিশ্লেষণে ঢাকার খুচরা ও পাইকারি বাজারের তথ্য বলেছে- পেঁয়াজ, ছোলা, চিনি, মশুর ডাল, খেজুর ও গরুর মাংসের দাম গত রোজার তুলনায় বেশি। এর মধ্যে পেঁয়াজ কিনতে ১৫০%, ছোলা কিনতে ২২%, চিনিতে ২১%, ডালে ১০%, একেবারেই সাধারণ মানের খোলা খেজুর কিনতে ৭%, গরুর মাংস কিনতে ৪%, রসুন কিনতে ৩৮% এবং আলু কিনতে ৭৫% বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর বাইপাসে সড়ক দুর্ঘটনায় এক নারী নিহত, আহত চার

রোজা ঘিরে লাগামহীন নিত্যপণ্যের দাম

Update Time : 01:17:29 am, Friday, 5 April 2024

আমিরুল ইসলাম অমর: সিয়াম সাধনার রমজান মাস শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে প্রথম রোজাও শেষ। আজ দ্বিতীয় রোজা। রমজান মাসটি পুণ্যের হলেও বেশি মুনাফার আশায় থাকেন এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। এই মাসে অতিরিক্ত বেশি লাভ করতেও মরিয়া থাকেন তারা। এ যেন রীতিতে পরিণত করেছে এসব মুনাফাভোগী ব্যবসায়ীরা। বিগত বছরগুলোর ন্যায় এবারও ব্যতিক্রম ঘটছে না। তবে এবার অসাধু মুনাফাভোগী ব্যবসায়ীরা একটু বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এবার মাসখানেক আগে থেকেই নানা অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়াতে শুরু করেছেন তারা। সরকার এবার রোজায় বাজার নিয়ন্ত্রণে ভোক্তাদের নানা আশ্বাস দিলেও বাস্তবে তার চিত্র দেখা যাচ্ছে না। ছোলা, ডাল, চিনি, পেঁয়াজ, বেগুন, লেবু, শশা, ধনেপাতা, কলা, খেজুর, মাছ-মাংস, ফলমূল ও সবজিসহ প্রায় সবই চড়া দামে কিনতে হচ্ছে। রোজাকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষের খরচ আরো বাড়তে শুরু করেছে। মূল্যস্ফীতির চাপে এমনিতেই চিড়েচ্যাপ্টা সীমিত ও নিম্নআয়ের মানুষ। তার ওপর রোজা ঘিরে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন দাম।

রমজান মাসের বাড়তি খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় সময় কাটাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। দিন দিন মানুষের সংসারে চাপ বেড়েই চলছে। এমন পরিস্থিতিতে নিরব কষ্টে জনমনে হা-হুতাশ দেখা যাচ্ছে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রোজার মাস খানেক আগে থেকেই ছোলা, অ্যাংকর, মুগসহ সব ধরনের ডালের দাম বেড়েছে। খেজুরের দাম লাগামহীন। চিনির বাজারে অস্থিরতা। সয়াবিন তেলের দাম যদিও কিছুটা কমেছে, কিন্তু তা যৎসামান্য। ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দামও চড়া। দাম বাড়ার তালিকা থেকে বাদ পড়েনি চিড়া-মুড়িও। সবজির মধ্যে এরই মধ্যে বেগুন, শসা, লেবুসহ কয়েকটি পণ্যের দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুন।

সূত্র মতে, কয়েক বছর ধরে পবিত্র রমজান মাসে অন্তত কম দামে পেঁয়াজ কিনতে পারতেন মানুষ। কারণ, রোজা শুরুর সময় পেঁয়াজের মৌসুম চলে। এবার সেই পেঁয়াজের দরও চড়া। রোজা শুরুর আগে থেকেই রাজধানীর বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯০ থেকে ১১০ টাকা। গত বছর রোজার আগে একই পেঁয়াজের কেজি ছিল ৪০ টাকার মধ্যে।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তালিকা ধরে মোটা চাল, খোলা আটা, সয়াবিন তেল (বোতল), চিনি, মসুর ডাল (বড় দানা), অ্যাংকর ডাল, ছোলা, পেঁয়াজ, দেশি রসুন, দেশি শুকনা মরিচ, রুই মাছ, ব্রয়লার মুরগি, গরুর মাংস, ডিম (হালি) ও খেজুর- এই ১৫ পণ্যের মূল্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত রোজার তুলনায় এবার ১০টি পণ্যের দাম বেশি; পাঁচটির কম। যে পাঁচটি পণ্যের দাম কম, সেগুলোর মূল্য গত বছর অনেক বেড়ে গিয়েছিল। তারপর কমেছে। তবে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নয়। ফলে সেগুলোর দামও চড়া বলা যায়। যেমন ব্রয়লার মুরগি।

২০২২ সালের আগে ব্রয়লার মুরগি ছিল ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি। রোজা এলে দর কমত। কারণ, রোজায় রেস্তোরাঁগুলোতে মুরগির চাহিদা কমে যায়। এবার চিত্র ভিন্ন। দেশের বাজারে কয়েক মাস ধরে ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৯০ টাকার আশপাশে ছিল। এবার রোজায় দাম বেড়েছে। কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে গতকাল বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়। রোজা শুরুর আগের কয়েক দিনে এবার দাম বেড়েছে মসুর ডাল, অ্যাংকর ডাল, মুগডাল, ছোলা, চিনি, সোনালি মুরগি, গরুর মাংস, বিভিন্ন ধরনের মাছ, বেগুনসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি, লেবু, শসা, ধনেপাতা ও ফলের দাম। কমেছে শুধু সয়াবিন তেলের দাম।

সব মিলিয়ে নিত্যপণ্যের বাজার অনেকটা লাগামহীন। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, সেগুনবাগিচা, মালিবাগ, মগবাজার, রামপুরা, মোহাম্মদপুর, মিরপুর ও কারওয়ান বাজার ঘুরে গতকাল এই চিত্র দেখা গেছে। গতকাল যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজারে একজন সাধারণ ক্রেতার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, আমরা গরিব মানুষ। আপেল, কমলা, আঙ্গুর ও দামিদামি ফলমূল খেতে পারি না। তবে, রোজা আসলে লেবুর শরবত, কলা ও খেজুর খাওয়ার চেষ্টা করি। এবার মনে হয় তাও কপালে জুটবে না। লেবু মানভেদে ৪০ থেকে ১২০ টাকা হালি, খেজুর কমদামিটাও ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি। যে কলা তিন-চার দিন আগেও কিনেছি ৪০ থেকে ৮০ টাকা ডজন সেই কলা এখন ৮০ থেকে ১৫০ টাকা ডজন। আর অন্যান্য জিনিসের কথা না হয় বললামই না। এমন দাম থাকলে এগুলো কেনারও সাধ্য হবে না। হয়তো শুধু মুড়ি ও পানি দিয়েই আমাদের ইফতার করতে হবে।

বাজার করতে আসা স্বল্প বেতনের চাকরি করা একজনের সাথে কথা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, জিনিসের দাম অতিরিক্ত হওয়ায় চাহিদার চেয়েও অনেক কম জিনিস কিনে নিচ্ছি। তাও খুব প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো। ফলমূলের দাম শুনলেই হতবাক হয়ে যাই। এজন্য সেগুলো কিনতে পারি না। তিনি বলেন, রমজান মাস এলেই সব জিনিসের দাম বেড়ে যায়। অথচ কোনো জিনিসের অভাব নেই বাজারে। এভাবে চলতে পারে না। সংসার চালাতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের ঘোষিত ইশতেহারে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। নতুন মন্ত্রিসভা দায়িত্ব নেওয়ার পর দাম কমাতে চারটি পণ্যের (চাল, চিনি, ভোজ্যতেল ও খেজুর) শুল্ককর কমানো হয়। এতে কমেছে শুধু সয়াবিন তেলের দাম, লিটারে ১০ টাকা। বাজারে অভিযান, হুঁশিয়ারি অন্য পণ্যের দাম কমাতে পারেনি। নির্ধারিত দর কার্যকর করতেও সফল হয়নি সরকারি সংস্থা।

যেমন রান্নায় ব্যবহৃত তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ১২ কেজির সিলিন্ডারের নির্ধারিত দর ১ হাজার ৪৮২ টাকা। যদিও রাজধানীতে তা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৭০০ টাকার আশপাশে।

এদিকে, ইফতারে মানুষ সাধারণত ছোলা, বেগুনি, পেঁয়াজু, শসা ও কিছু ফল রাখেন। শরবত তৈরির জন্য লাগে লেবু। দুই মাস আগেই ছোলার দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছিল। এখন বেড়েছে আরো ৫ টাকা। বাজারে ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকা কেজি। বেগুনি তৈরির বেগুনের দাম বেড়েছে গত দুই দিনে। লম্বা বেগুন ছিল মানভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। গতকাল তা ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়।

মৌসুমের এই সময়টায় ক্ষিরা থাকে। দামও কম থাকে। কয়েক দিন আগেও ক্ষিরা ৪০ টাকার আশপাশে ছিল। গতকাল তা ৭০ থেকে ৯০ টাকা কেজি চান বিক্রেতারা। শসার দামও ৬০ থেকে বেড়ে ৯০ থেকে ১১০ টাকা কেজি হয়েছে। লেবুর দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। আকারভেদে প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ১২০ টাকা।

শরবত তৈরিতে লাগে চিনি। বাজারে এক কেজি চিনি কিনতে এখন ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা লাগছে। এবার চিনির ওপর শুল্ক কমানো হয়েছিল। তাতে দাম কমার কথা কেজিতে ১ টাকার মতো। কিন্তু দাম কমেনি; বরং বেড়েছে কেজিতে পাঁচ টাকা।

খেজুরের দাম কমাতে রোজার আগে সরকার শুল্কহার ১০ শতাংশ কমিয়ে দেয়। যদিও এখনো খেজুর আমদানিতে ১৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক, ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট), ৫ শতাংশ করে অগ্রিম আয়কর ও অগ্রিম কর এবং ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক রয়েছে। পাশাপাশি গত নভেম্বরে খেজুরের ট্যারিফ ভ্যালু (শুল্ক আরোপের সর্বনিম্ন দর) বাড়ানো হয়। সব মিলিয়ে বাজারে খেজুরের দাম এক টাকাও কমেনি; বরং বেড়েছে। টিসিবির হিসাবে, সাধারণ মানের খেজুরের সর্বনিম্ন দর এখন ২৮০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগেও ২৫০ টাকা ছিল।

ইফতারে অনেকেই খেজুরের পাশাপাশি মাল্টা, আপেল, পেয়ারা, আনারস, তরমুজ ইত্যাদি রাখার চেষ্টা করেন। ফলের দাম কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে। যেমন এক কেজি মাল্টা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা চাইছেন বিক্রেতারা।

স্বল্প আয়ের পরিবারেও সাহরিতে মাছ অথবা মাংসের কোনো পদ রাখার চেষ্টা থাকে। গতকাল মাছ কেজিতে ২০ থেকে ১০০ টাকা বেশি চাইছিলেন বিক্রেতারা। চাষের বাইরে অন্যান্য মাছের দাম অত্যধিক বেশি। যেমন নদীর ছোট চিংড়ির কেজি ১ হাজার ২০০ টাকা। মাঝারি শোল মাছের কেজি চাওয়া হচ্ছিল ৮০০ টাকা। সোনালি মুরগির দাম ৩০ টাকা বেড়ে ৩৩০-৩৫০ টাকা এবং গরুর মাংস ৫০ টাকা বেড়ে ৭৫০-৮০০ টাকা কেজি বিক্রি করতে দেখা যায়।

টিসিবির বাজার বিশ্লেষণে ঢাকার খুচরা ও পাইকারি বাজারের তথ্য বলেছে- পেঁয়াজ, ছোলা, চিনি, মশুর ডাল, খেজুর ও গরুর মাংসের দাম গত রোজার তুলনায় বেশি। এর মধ্যে পেঁয়াজ কিনতে ১৫০%, ছোলা কিনতে ২২%, চিনিতে ২১%, ডালে ১০%, একেবারেই সাধারণ মানের খোলা খেজুর কিনতে ৭%, গরুর মাংস কিনতে ৪%, রসুন কিনতে ৩৮% এবং আলু কিনতে ৭৫% বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে।