রহুল আমিন ইমাম: ২৫ বছর বয়সের বুকের ধন ছেলে কাউসার বাগমারকে মাদকের জন্য অতিষ্ট হয়ে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করার পর বাবা নামের ওই মানুষটির কতোই-না আকুতি!
বুধবার (৩ এপ্রিল ২০২৪) ভোরে গাজীপুরের কালীগঞ্জের জামালপুর এলাকায় ছেলে কাউসারের মরণছোবল নেশার আসক্তের অত্যাচার থেকে মুক্তি পেতে বাবার পাশের রুমে গভীর ঘুমে থাকা ছেলেকে কুড়াল দিয়ে কোপাতে থাকেন। কুড়ালের আঘাতে ছেলে বলতে থাকে বাবা তুমি আমারে আর মাইরো না, আর কোপ দিওনা, আমি আর নেশার টাকা চাইমু না তোমগোর কাছে!
আর্তনাদের এমন চিৎকারে ছেলের উপর বাবার কুড়াল দিয়ে কোপানী থেমে যায় মুহূর্তেই। রক্তাক্ত ছেলেকে আপন করে কোলে জড়িয়ে ধরে হাউ-মাউ করে কাঁদতে থাকেন বাবা নামের ওই মানুষটি। কাঁদতে থাকেন আর বলতে থাকেন বাবা তুই আমার আদরের ধন, কলিজার টুকরো, মানিক-রতন। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। ততোক্ষণে ছেলের নিথর দেহটি বাবার কোলে ঘুমিয়ে পড়েছে চিরদিনের জন্য। আশপাশ থেকে ছুটে আসা মানুষজন ছেলে হত্যাকারী বাবাকে বলতে থাকেন, আপনি পালিয়ে যান, পুলিশ আসবে আপনাকে ধরে নিয়ে যাবে। আপনার ফাঁসি হবে, কারোর কথা-ই শুনছেন না বাবা। বাবা বলছেন, আমার বাবাডারে আমি অনেক ভালোবাসি। আমার বাবাডারে ছাইড়া আমি কই যামু, আমার আর বাইচ্চা থাইক্কা লাভ নাই! ছেলের লাশের কাছে বসে বাবার এমন আকুতি আর্তনাথে আশপাশের মানুষজনরা চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি!
ঠিক এমন সময় বেরশিক পুলিশ হাজির। ছেলের মৃত্যু শোকে বাবা হাউ-মাউ করে বলতে লাগলেন আমি আমার পোলারে মাইরা ফালাইছি, নেশার টাকা জোগাড় কইড়া দিতে না পারায়। আমারে জেল দেন, ফাঁসি দেন। আমারে থানায় লইয়া যান!
এ সময় নিজ ইচ্ছায় পুলিশের সাথে রওনা দেওয়ার সময় বাবা ছেলের শরীর জড়িয়ে ধরে আবারও হাউ-মাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকেন- বাবা তোমারে আমি মারতে চাই নাই! তোমারে আমি কথা দিয়া গেলাম, সরকারের আদালতে গিয়া আমি কমু আমার বাবাডার হত্যাকান্ডের বিনিময়ে হলেও যেন দেশে মরননেশা মাদকের রাজ্য বন্ধ করে সরকার!
বাবা আমার খুব কষ্ট লাগতাছে, বাবা আমার বুকটা ছিড়া যাইতাছে তোমার লেইগা। তোমারে কই পামু আমি বাবা। তোমারে ছাড়া আমি জেলের মধ্যে কেমনে থাকমু একলা একলা? পুলিশের গাড়িতে উঠতে উঠতে বাবার এমনসব কথা আর দুইচোখ ভরা কান্নায় কেঁদেছেন উপস্থিত সবাই…