মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল: টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক সংলগ্ন ৩রা গোড়ান-সাটিয়চড়ায় ঢাকার বাইরে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ দিবস। এই প্রতিরোধ যুদ্ধে ২৯ জন ইপিআর ও ১৫১ জন বাঙ্গালী শহীদ হন। দেশ স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও ঢাকার বাইরে প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধের স্থান গোড়ান -সাটিয়াচড়ায় বদ্ধভূমি এবং শহীদদের গণকবর সংরক্ষন হয়নি।
আজ মঙ্গলবার (২ রা এপ্রিল) ৩রা এপ্রিল ১৯৭১ স্বাধীনতার প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ স্মৃতি সংসদের সভাপতি গোলাম সওজব পাওয়ার চৌধুরী ও আওয়ামীলীগ নেতা তৌফিকুর রহমান তালুকদার রাজিব জানান, ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের পর মুক্তিপাগল জনতা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে। টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ফজলুর রহমান খান ফরুক, প্রয়াত সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মো. একাব্বর হোসেন ও বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বিরোত্তমের নের্তৃত্বে আপামর জনতা প্রতিরোধ যুদ্ধে ঝাপিয়ে পরেন। স্থান হিসেবে বেছে নেন ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুর উপজেলার গোড়ান-সাটিয়াচড়া। ২রা এপ্রিল মুক্তিপাগল জনতা জানতে পারেন, পাকসেনারা এই রাস্তা দিয়ে গাড়িবহর নিয়ে টাঙ্গাইলের উদ্দেশে আসছে। গোড়ান-সাটিয়াচড়া আসামাত্র চার দিক থেকে আক্রমন শুরু হয়। এই প্রতিরোধ যুদ্ধে ২৯ জন ইপিআরসহ সাটিয়াচড়াসহ আশপাশের গ্রামের ১৫১ জন নারী পুরুষ শহীদ হন। পাকসেনারা হেলিকপ্টারযোগে আক্রমন করে মুক্তিযুদ্ধা, ইপিআর ও নারী পুরুষকে হত্যা করে এবং জালিয়ে পুড়িয়ে দেয় শত-শত ঘরবাড়ি। শহীদদের মধ্যে সুবেদার আব্দুল আজিজ, হাবিলদার আব্দুল খালেক, হাবিলদার খলিলুর, আব্দুল গফুর, মকবুল হোসেন, করটিয়া সরকারী সা’দত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ শাখার ছাত্রলীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক জুমারত আলীসহ ২৯ জন ইপিআর ও ১৫১ জন শহীদ হন।
এদিকে ঢাকার বাইরে মির্জাপুরে এই প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধের স্থানে দীর্ঘ ৫৪ বছরেও বদ্ধভূমি সংরক্ষন ও গণ কবরের স্থান চিহিৃত এবং নির্মান হয়নি বাউন্ডারী। সম্প্রতি টাঙ্গাইল জেলা পরিষদ একটি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মান এবং শহীদদের নামের তালিকা দিয়ে শুধু একটি স্মৃতি ফলক নির্মান করেছেন। ১৯৭১ স্বাধীনতার প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ গোড়ান-সাটিয়াচড়া স্মৃতি সংসদ ও এলাকাবাসী প্রতি বছর দিবসটির স্মরন করে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে থাকেন।
এ ব্যাপারে জামুর্কী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ডি এ মতিন, স্মৃতি সংসদের সভাপতি গোলাম নওজব পাওয়ার চৌধুরী বলেন শহীদ পরিবারগুলো রাজধানী ঢাকার বাইওে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক সংলগ্ন গোড়ান-সাটিয়াচুড়ায় প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধের স্থানে গণ কবর সংরক্ষন এবং চারপাশে বাউন্ডারী নির্মানের জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ নুরুল আলম বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ভাইস চেয়ারম্যান এবং উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শক্রমে মির্জাপুর উপজেলার গোড়ান-সাটিয়াচড়া এলাকায় প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধের স্থানে শহীদদের গনকবর ও বদ্ধভুমি চিহিৃত এবং তা সংরক্ষনসহ চারপাশে বাউন্ডারী নির্মানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
সৌজন্যে: সাপ্তাহিক বারবেলা।