টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে পাঁচটি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। এরমধ্যে তিনটিতে চিকিৎসক নেই। অন্য দুটিতে থাকলেও তারা নিয়মিত উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এলাকাবাসী।
উপজেলার চারটি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র সরেজমিনে স্বাস্থ্যসেবার এ বেহাল চিত্র পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, এই উপজেলায় সরকারি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পাঁচ ইউনিয়নে পাঁচটি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে গোড়াই ইউনিয়নের ধেরুয়া, ভাওড়া ইউনিয়নের গলচারা, ফতেপুর ইউনিয়নের ফতেপুর, আনাইতারা ইউনিয়নের আনাইতারা এবং মহেড়া ইউনিয়নের ছাওয়ালাী বাজার উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র।
গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে গলচারা উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, আমড়াইল গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহানসহ ১০/১২ জন চিকিৎসা নিতে এসেছেন। ওই কেন্দ্রের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার জামিলুজ্জামান তাদের কিছু ওষুধ দিয়ে বিদায় দিলেন। সেখানে মেডিকেল অফিসার ছিলেন ডা. সাবিহা আক্তার। প্রায় পাঁচ মাস আগে তিনি অন্যত্র বদলি হওয়ার পর নতুন কাউকে পদায়ন করা হয়নি।
দুপুর ১টার দিকে আনাইতারা উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ফার্মাসিস্ট সিরাজ উদ্দিন স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা রোগীদের রোগের কথা জিজ্ঞাসা করে ওষুধ দিচ্ছেন। ২০২২ সালের ২০ অক্টোবর ওই কেন্দ্রে একজন মেডিকেল অফিসার পদায়ন হলেও তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাজ করেন। যে কারণে ওই কেন্দ্রটি মেডিকেল অফিসার ছাড়াই চলছে। তাছাড়া ওই কেন্দ্রের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার সাবিনা আক্তারও অধিকাংশ সময় অনুপস্থিত থাকেন বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন।
সেবা নিতে আসা আগৈদ গ্রামের ছায়া রানী দাস বলেন, প্রায় এক বছর হলো এখানে কোনো ডাক্তার নেই। যখন ছিল তখনও কোনো সপ্তাহে একদিন আবার কোনো সপ্তাহে আসতোই না। স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ জন মানুষ সেবা নিতে আসেন।
দুপুর ২টার দিকে ছাওয়ালী বাজার উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আবু হাসনাত আল বারী এবং ফার্মাসিস্ট অনিতা রানী দাস স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা রোগীদের কিছু ওষুধ দিয়ে বিদায় করছেন।
ওই কেন্দ্রের নিয়োগপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার ডা. আইরিন সুলতানাকে পাওয়া যায়নি। তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেছেন বলে জানান তারা।
স্থানীয় অবসরপ্রাপ্ত এক শিক্ষক মঞ্জু লাল চক্রবর্তী বলেন, ডাক্তারকে মাঝেমধ্যে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দেখেছেন।
তবে সেবা নিতে আসা মহেড়া গ্রামের আক্তারুজ্জামান, পারুল বেগম, পিন্টু মিয়াসহ অনেকেই জানান, যারা আছেন তারাই তো ডাক্তার। আবার ডাক্তার কে? তারা মেডিকেল অফিসারকে চেনেন না, কোনোদিন দেখেননি।
ধেরুয়া উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে মেডিকেল অফিসার না থাকায় রোগীরা কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না বলে জানা গেছে। গোড়াই ইউনিয়ন (পূর্ব) যুবলীগের সভাপতি মীর শরিফুজ্জামান সোহেল বলেন, ধেরুয়া উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে স্থানীয় মানুষ প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। দীর্ঘদিন ধরে ডাক্তার না থাকায় এলাকার মানুষ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
ছাওয়ালী বাজার উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ডা. আইরিন সুলতানার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হলে জানান, সেদিন তিনি ছুটিতে ছিলেন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তাকে যে কয়দিন যেতে বলেন তিনি সে কয়দিনই যান বলে দাবি করেন।
এদিকে, ফতেপুর উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ডা. রুবায়েতও নিয়মিত যান না বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ফতেপুর বাজারের ব্যবসায়ী ইব্রাহীম সিকদারসহ অনেকেই অভিযোগ করেন। তিনি আগে সপ্তাহে দুইদিন আসলেও গত একমাস ধরে একদিন আসেন বলে তারা অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে মির্জাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফরিদুল ইসলাম বলেন, ধেরুয়া ও গলচারা উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডাক্তার নেই। এছাড়া আনাইতারা উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বসবেন বলে নির্দেশনা রয়েছে। তাছাড়া ছাওয়ালী ও ফতেপুর উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার সপ্তাহে দুইদিন বসেন। বাকি দিনগুলো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেন।
-সৌজন্যে: জাগো নিউজ।